রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দেড় মাস ধরে শূন্য রয়েছে চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনারের পদ। এইসব পদে কাউকে নিয়োগ না দেয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে দুদুকের যাবতীয় কার্যক্রম । দুদুক আইনে চেয়ারম্যান ,কমিশনাররাই মুল চালিকাশক্তি । চেয়াম্যান হিসাবে মন্ত্রিপরিষদের সিনিয়র সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেনের নাম শুনা যাচ্ছে । তারা দুজই দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ।দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান কমিশনার না থকায় দুদকের কার্যক্রমে নেমে এসেছে স্থবিরতা, পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে দুদকের বিভিন্ন অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে ৪৩৯টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেওয়া হয়। ওই সময়ে ২২৭টি অভিযোগের পরিসমাপ্তি বা নথিভুক্তি (অভিযোগ থেকে অব্যাহতি) হয়। এর মধ্যে ৩২৮টি মামলা ও ৩৪৫টি মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়।এ ছাড়া আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে যথাক্রমে ৩১টি, ১০০টি, ৭৩টিসহ মোট ২০৪টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে গেল নভেম্বরে নতুন কোনো অনুসন্ধান শুরু হয়নি। নতুন করে মামলাও করা হয়নি; দেওয়া হয়নি কোনো চার্জশিটও।দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে স্বাধীন সংস্থাটির যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ প্রণয়ন করা হয়, যেখানে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কমিশনের হাতেই সব ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়েছে।এদিকে কমিশনের পদত্যাগের পর গত ১০ নভেম্বর দুদকের নতুন চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার খুঁজতে সার্চ কমিটি গঠন করা হলেও সার্চ কমিটি এখনো রাষ্ট্রপতির কাছে কমিশন গঠনের নাম প্রস্তাব করেনি। কিন্তু দুদক আইন অনুসারে পদত্যাগ বা অপসারণের ৩০ দিনের মধ্যে নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন ‘দুর্নীতি দমন ব্যুরো’ বিলুপ্ত করে ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘দুর্নীতি দমন কমিশন’। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সুলতান হোসেন খান। চার বছর মেয়াদ পূরণের আগেই ২০০৭ সালে ‘এক-এগারোর’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি পদত্যাগ করেন। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সাবেক সেনাপ্রধান হাসান মশহুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে পুনর্গঠিত হয় কমিশন। তিনিও মেয়াদ পূরণের আগে ফিরে যান। এরপর ২০০৯ সালে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান সাবেক সচিব গোলাম রহমান। মেয়াদ শেষে তিনি ফিরে গেলে ২০১৩ সালে চেয়ারম্যান হন মো. বদিউজ্জামান। এরপর ২০১৬ সালের মার্চে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ। ইকবাল মাহমুদের মেয়াদ শেষে ২০২১ সালের মার্চে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান সাবেক সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। তার সঙ্গে কমিশনার হিসেবে যোগ দেন সাবেক জেলা জজ মো. জহুরুল হক। এদিকে ইকবাল মাহমুদের কমিশনের সঙ্গে নিয়োগ পাওয়া কমিশনার মোজাম্মেল হক খানের মেয়াদ পূর্ণ হলে গত বছর জুলাইয়ে ওই পদে স্থলাভিষিক্ত হন সাবেক সচিব আছিয়া খাতুন। গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এরপর বিভিন্ন মহলের দাবির মুখে গত ২৯ অক্টোবর দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ এবং দুই কমিশনার মো. জহুরুল হক (তদন্ত) ও আছিয়া খাতুন (অনুসন্ধান) পদত্যাগ করেন। ৩১ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন। এরপর কমিশনের শূন্যতার ৪১ দিন পার হলেও এখনো নতুন চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়নি।পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ দিবসটি পালন করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে এবার এমন এক সময়ে দিবসটি পালন করা হচ্ছে, যখন গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিষ্ট সরকারের গত সাড়ে ১৫ বছরের অসংখ্য দুর্নীতির হিসাব নেওয়ার সময়। অথচ এই সময়ে দেড় মাস ধরে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানে শূন্য রয়েছে চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনারের পদ।