রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণের চেষ্টা করছে মন্তব্য করে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম যে বক্তব্য দিয়েছেন তার কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।তিনি বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা বিচার বিভাগ, দেশের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। আপনাদের (অন্তবর্তী সরকার) কথাবার্তা এবং আচরণ কেন হাসিনার মতো হবে। আপনারা অগ্রযাত্রাকে সহযোগিতা করবেন। সরকারের সমালোচনা করা মানে ব্যর্থ নয়, এটিই গণতন্ত্রের রীতি।’রিজভী বলেন, ড. ইউনূসের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে যদি বলি, তার মতো সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে যখন হেনস্তা করা হয়েছিল, গণতন্ত্রকে আওয়ামী লীগ কুক্ষিগত করে রেখেছিল, খালেদা জিয়া যখন অত্যাচারিত হয়েছেন, তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশান্তরি করে রাখা হয়েছে, বিনাদোষে বিএনপির নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠানো হলো, গুম-খুনে মেতে উঠেছিল, তখন তো ড. ইউনূস একটি বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানাননি। অথচ তার প্রতি যখন অন্যায় হয়েছে, বিএনপি কিন্তু ঠিকই প্রতিবাদ করেছে। ইউনূস সাহেব সর্বনন্দিত একজন ব্যক্তি। ক্ষুধা বিমোচন ও দারিদ্র্য দূরীকরণে যে ভূমিকা রেখেছেন তাতে আমরা গর্ববোধ করি। তবে জাতিকে যখন আওয়ামী লীগ দাসে পরিণত করেছিল, তখন জাতি প্রত্যাশা করেছিল, ড. ইউনূস প্রতিবাদ জানাবেন, বিবৃতি দিবেন।’তিনি বলেন, ইংরেজ শাসনামলে ১৯১৯ সালে ইংরেজ সৈনিকরা যখন গুলি চালিয়ে হিন্দুদের হত্যা করল, তখন ইংরেজদের দেওয়া সম্মাননা প্রত্যাহার করেছিল।বৃহস্পতিবার দুপুরে যাত্রাবাড়ীর ভাঙ্গাপ্রেসস্থ নবী টাওয়ারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ পরিবারগুলোর মাঝে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান শেষে তিনি এসব কথা বলেন।ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ঢাকা-৫ আসনের সমন্বয়কারী নবী উল্লাহ নবীর সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আ ন ম সাইফুল ইসলাম, মকবুল হোসেন টিপুসহ যাত্রাবাড়ীতে শহীদ পরিবারের পরিবারবর্গ।রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা এমন একটি দেশে বাস করছি যেখানে বাস করতে হলে পার্শ্ববর্তী দেশের অনুমতি নিয়ে বসবাস করতে হবে এবং তারা যাকে ক্ষমতায় আনতে চায় তাকেই মানতে হবে। ওই সরকার যেভাবে দেশ চালাবে সেভাবেই চলতে হবে। তাহলে পাক যুদ্ধ কেন হয়েছিলো? পাকিস্তান ও তাদের মধ্যে তো কোনো পার্থক্য দেখছি না।’তিনি বলেন, ‘আজকে পতিত স্বৈরশাসকের জন্য ভারত মায়াকান্না করছে। দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। এই যাত্রাবাড়ীতে তো শত শত মানুষ হত্যা করা হয়েছে। এখানেই তো অনেক মন্দির আছে সেখানে কোনো হামলা হয়েছে, কোনো হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হয়েছে? এসব ধূম্রজাল সৃষ্টি করে তারা গণধিকৃত আওয়ামী লীগকে আবার ফিরিয়ে আনতে চায়।’রিজভী বলেন, এই যাত্রাবাড়ীতে অসংখ্য মা তার সন্তান হারিয়েছে, স্ত্রী বিধবা হয়েছে, সন্তান এতিম হয়েছে। যাত্রাবাড়ীর এই বিপ্লব জেলে থেকে আমাদের আত্মবিহ্বল করেছে। চার আগস্টও আমি রিমান্ডে ছিলাম। তখনও শুনলাম গণতন্ত্রের দাবিতে যাত্রাবাড়ী জ্বলছে। এখানে মাসুম বাচ্চারাও ঘরে বসে থাকেনি। তারাতো রাজনীতি বোঝে না। শুধু শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শ্লোগান দেওয়ার অপরাধে এই মাসুম বাচ্চাদেরও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই আত্মত্যাগ পৃথিবীতে খুবই বিরল। এই যাত্রাবাড়ীতে ঘরে ঘরে জাতীয়তাবাদী শক্তি। এই শক্তি সকল অত্যাচার-অবিচারের ভেদকে বের হতে সক্ষম।’তিনি আরও বলেন, পুলিশ প্রশাসনে এখনও পতিত আওয়ামী স্বৈরশাসকের দোসর বিদ্যমান। তাই হত্যা মামলা নিয়ে গড়িমসি করছেন। হত্যাকারীদের আটকের জন্য পুলিশ কঠিন হচ্ছে না। অবিলম্বে পুলিশের নামধারী এই ছাত্রলীগের ক্যাডারদের চাকরিচ্যুত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’